ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

মামলার জালে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, আদায়ে ধীর গতি

জাফর আহমদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৫, নভেম্বর ১৯, ২০২২
মামলার জালে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, আদায়ে ধীর গতি

ঢাকা: মামলার জালে আটকে গেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও  প্রয়োজনীয সংখ্যক অর্থঋণ আদালত না থাকায় এবং বিচার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এ টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।

এতে এদিকে আর্থিক খাতের বোঝা বাড়ছে। যা পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে খেলাপি ঋণসহ আটকে থাকা অর্থ আদায়ে পদক্ষেপ নিলেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

মামলা দ্রুত নিষ্পতিতে অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, ঋণ সম্পর্কিক বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং বিচারকদের অর্থঋণ বিষয়ে অধিকতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে অর্থমন্ত্রণালয়ের আথির্ক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে দাবি তুলেছে ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ৯৪ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আটকে আছে। দুই লাখ ৫৭ হাজার ২১৫ মামলার বিপরীতে এ সব টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে ৬০ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৮ মামলার বিপরীতে দুই লাখ ৯ হাজার ২২৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর ৩৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯ হাজার ৯৭৭ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ১৪ হাজার ১৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

বাণিজ্যিক ওয়ান ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এ সম্পর্কিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৮ বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকায় ৪টি, চট্টগ্রামে ১টি, খুলনায় ১টি ও ময়সনসিংহে ১টি অর্থঋণ আদালত আছে। অন্য ৪টি  বিভাগীয় শহরে কোন সুনির্দষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই।  

এছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে কিছু কিছু জেলায় অর্থঋণ আদালত থাকলেও বেশিরভাগ জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। এবং ওই বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্থঋণ আদালতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকও চায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হতে প্রয়োজনীয় আদালত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক। এ সব ব্যাংকও তাদের খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম নিয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে।

এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বাংলানিউজ২৪.কমকে বলেন, এটা যে শুধু বড় অংকের টাকা আটকে আছে তাই নয়; অন্যকেও খেলাপি হতে উৎসাহিত করছে। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে মামলায় গেলেই মামলাদীর্ঘসূত্রিতায় অনেক সময় পাবে।

তিনি আরো বলেন, এ মামলা যদি নিষ্পত্তি হয়, সেটা যে পক্ষেই রায়টা যাবে মামলাটা শেষ হয়ে যাবে। তখন ব্যাংকের প্রভিশন (খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের রাখা সঞ্চিতি) রাখতে হবে না। খেলাপি ঋণের হিসাব টানা লাগবে না। সুতরাং এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে বড় অংকের খেলাপি ঋণ খুব দ্রুত কমে যাবে। সে কারণে অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি যতটা জরুরি, সেই সঙ্গে ঋণ সম্পর্কিত মামলা বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণগ্রহিতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায় করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যাক অর্থঋণ আদালত না থাকার কারণে মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এর ফলে বছরের পর বছর ধরে মামলা ঝুলে থাকছে। আটকে থাকছে ব্যাংকের তথা জনগণের টাকা বলেও জানান তিনি।  

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে মন্দঋণের বোঝা বাড়ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে পুরো শিল্প ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 এ বিষয়ে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলানিউজ২৪.কমকে বলেন, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে অর্থঋণ আদালদ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এ উদ্যোগ ভালো ছিল। কিন্তু প্রথমত, পর্যাপ্ত সংখ্যক অর্থঋণ আদালত না থাকা; দ্বিতীয়ত, বিচারকদের অর্থঋণ সম্পর্কে যথেষ্ট ট্রেনিং থাকে না। তারা ফৌজদারি ট্রেনিং দিয়ে অর্থঋণের মামলা করছেন। যে কারণে এই  তারা ‘নিরপেক্ষ‘ না হয়ে ‘মানবিক, হচ্ছেন। এতে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ড. মনসুর আরো বলেন, এ  মামলার কারণে আটকে থাকা টাকা আদায়ের জন্য আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিচারকদের অর্থঋণ সম্পর্কে যথেষ্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
জেএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।